ঢাকা থেকে বরিশালে পর্যটকবাহী রকেট জাহাজ ১৫ নভেম্বর চলাচল শুরু করবে

এইচ এম আমীন, বার্তা সম্পাদক, ট্রাভেল পোস্ট ২৪.কম:- বাংলাদেশে আধুনিক দুই প্যাডেল চালিত রকেট সার্ভিসের একশো বছর পূর্তির লক্ষে ১৯ বছর বিরতির পর গত ২৪ অক্টোবর পিএস মাসুদ ঢাকা – বরিশাল নৌ রুটে চলাচলের জন্য ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত ট্রাইল দেয়া হয়। উদ্বোধন করেন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ওবিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান সহ ঢাকা ও বরিশাল নৌ পোর্টের অফিসারা।

আগামী ১৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা হবে শতবর্ষের এই আধুনিক দ্বিতীয় তলা বিশিষ্ট রকেট পিএস মাসুদ। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান ১৯২৮ সালে কলিকাতায় তৈরি হয় দুই প্যাডেল চালিত চারটি আধুনিক রকেট [১] পিএস মাসুদ, [২] লেপচা, [৩] টার্ন ও [৪] গাজী, নামকরন করে ঢাকা থেকে বরিশাল, ঝালকাঠি, কাউখালী, হুলারহাট, মটবাড়িয়া বাগেরহাট ও খুলনা জেলার মাঝ স্থান মোড়লগঞ্জ শেষ টার্মিনালে পৌঁছে। ১৯২৮ সাল থেকে এই চারটি রকেট ঢাকা জেলা, বরিশাল জেলা, ঝালকাঠি জেলা, পিরোজপুর জেলা, বাগেরহাট জেলা ও খুলনা সহ পাঁচ জেলার শতশত যাত্রী প্রতিদিন পিএস মাসুদ, লেপচা, টার্ণ ও গাজি রকেটে চালাচল করতো। ৯৮ বছর ধরে যাত্রী সেবা দিলেও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এই রকেট সার্ভিস আর্থিক ভাবে লাভের মুখ দেখেনি।

পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলা বাসিন্দা এ্যাডভোকের জাকির হোসেন ঢাকা জর্জ কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী, তার স্ত্রী একজন স্কুল শিক্ষিকা তিনি পিরোজপুর জেলার নেসারাবাদ উপজেলা কর্মরত থাকার কারনে জাকির হোসেন নিয়মিত কাউখালী টার্মিনাল থেকে রকেট যোগে ঢাকা – পিরোজপুর যাতায়াতের জন্য দুই হাজার টাকা দিয়ে সিঙ্গেল ক্যাবিন ভাড়া করতেন। অথছ রকেটের কেরানীরা তাকে তিনশো টাকার টিকেট দিয়ে ১৭ শো টাকাই আত্মসাৎ করতো। বিআরটিসির এরকম অনিময় ও দুর্নীতি কারনে রকেট সার্ভিস কখনোই আর্থিক খাতে সফলতা দেখাতে পারেনি। তবে এই আইনজীবী মনে করেন। বিমান ও রেলের মতো যদি রকেট সার্ভিসে যাত্রীদের জন্য অনলাইনের মধ্যে টিকেট বুকিং দিতে পাড়লে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ আর্থিক ভাবে লাভবান হবে। অন্যদিকে দীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশন এলাকার বাসিন্দা মোসলে উদ্দিন তরুন তিনি ঢাকা কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লোয়ার স্কুল ও কলেজের একজন শিক্ষক। তিনি জানান শতবর্ষের আধুনিক রকেট পিএস মাসুদ কে বরিশাল নৌ রুটে যেমন চলাচল করবে ঠিক তেমনি গাজি ও লেপচা কে ঢাকা – ভোলা নৌ রুটে এবং টার্ণ রকেট কে ঢাকা – থেকে পিরোজপুর নৌ রুটে চালালল করলে শত শত যাত্রী উপকৃত হবে এবং বিআরটিসি এই সরকারি প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক ভাবে সফলতা পাবে। এই শিক্ষক আরো বলেন বিশ্বের কোন রাস্ট্রে শতবর্ষ বয়সী জাহাজ বা রকেট সচন নাই। একমাত্র বাংলাদেশই বিশ্বের শতবর্ষ পূর্বের নির্মিত আধুনিক চারটি দুই প্যাডেল চালিত রকেটের মালিক।

যেমন ঢাকার বুড়িগঙ্গার তীরে বাংলার নবাব সিরাজুত দৌলার বাস ভবন আহসান মঞ্জিল শতশত বছরের ইতিহাস বহন করে। ঠিক তেমনি আধুনিক এই চারটি রকেট পুরনো ইতিহাস বহন করতে পরবে। পিএস মাসুদ এর ইঞ্জিন অফিসার মনিরুল ইসলাম সোহাগ জানান বেলজিয়ামের তৈরি ১২ শো হর্স পাওয়ারের এই শক্তিশালী ইঞ্জিন ও তিনটি জেনারেটর সহ ঘন্টায় ১০৩ লিটার ডিজেল খায়। ঢাকা থেকে চার ঘন্টায় বরিশাল পৌঁছাতে সক্ষম। এই টকেটি আগে কয়লা চলতো।

১৯৮৩ সালে ডিজেল চালিত বেলজিয়ামের এই ইঞ্জিন স্থাপন করাহয়। পিএস মাসুদ ঘন্টায় ৯২ কিলোমিটার অতিক্রম করতে পারে। যাত্রী সেবার দায়িত্বে থাকা বিআরটিসি প্রকৌশলী ফয়েজুর রহমান জানান পিএস মাসুদ, লেপচা, টার্ণ ও গাজী সহ এই চরটি রকেট ২০২৭ সালে একশো বয়স পূর্ণ হবে। একশো বছর পূর্বে যে যাত্রী সেবায় এরকম আধুনিক নৌ যান ছিলো এই রকেট ই তার ঐতিহ্য বহন করছে। আমাদের এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে রকেট চারটি কে বিভিন্ন নৌ রুটে চালচল করানো হলে এক দিকে যাত্রীদের সেবা দেওয়া হবে। অন্যদিকে পুরানো ঐতিহ্যকে ধরে রাখা যাবে। এই রকেটে প্রথম শ্রেণির কেবিন ডবল ও সিঙ্গেল, দ্বিতীয় শ্রেণীর কেবিন ডাবল ও সিঙ্গেল এবং ডেগে তৃতীয় শ্রেণির ডালা বিছানায় বসার আসন রয়েছে যাত্রীদের জন্য । শতবছেরের পুরাণ হলেও টেকসই ও কাঠামগত অনেক মজবুদ। নতুনের চেয়েও অনেক শক্তিশালী রয়েছে এই চারটি রকেট।

Comments are closed.